চান্স তো পাওনি, কেমন লাগছে
'চান্স তো পাওনি, কেমন লাগছে'?
--এই প্রশ্নটা একশোজন চান্স না পাওয়া ছাত্রকে জিজ্ঞাসা করলে একশোজনই একটা কথা বলবে, 'এই কষ্টটা কাউকে বলে বোঝানো যাবে না'।
পরীক্ষা শেষ। তুমি খুব ভালো দিয়েছ পরীক্ষাটা।
শুধু অপেক্ষা করে আছো একটা এসএমএসের। এসএমএসটা ঠিকই আসলো। এসএমএসটা পড়ে তো তোমার আনন্দে লাফিয়ে ওঠার কথা ছিলো, কথা ছিলো দৌড়ে গিয়ে আব্বু-আম্মুকে জড়িয়ে ধরার ; কিন্তু তুমি ওঠোনি। একদম ফ্রিজ হয়ে বসে ছিলে, পলকহীন। বাকরুদ্ধ।
কারণ, তোমার মনে হয়েছে, তোমার আসলে ওঠার অধিকারটুকু নেই। তোমার হাসিমুখ কারো দেখবার প্রয়োজন নেই।
তোমার বন্ধুরা কোচিংয়ের সেলিব্রেশনে মাতামাতি করে। হাসি-হাসি মুখ নিয়ে প্রোফাইল পিকচার বদলায়। ক্যাপশন হিসেবে দু'লাইন ভাবের কবিতা দেয়, জীবন ও জগৎ সম্পর্কে গভীর দর্শনের কবিতা, কেউ হয়তোবা সেখানে #সাদা_অ্যাপ্রন লিখে হ্যাশট্যাগ দেয়।
তোমার তখন ভাল্লাগেনা। হৃৎপিন্ডের মাঝখানটায় হঠাৎ যেন তীক্ষ্ণ ছুরির ফলা এসে লাগে। তোমার ভেতরে একটু একটু করে জেদ চাপে। নিজেকে ছাড়িয়ে যাবার জন্য জেদ।
নিজেকে নতুন করে প্রমাণের জেদ।
জাগে না?
তোমার আত্মীয়-স্বজন হয়তো তোমাকেই শুনিয়ে শুনিয়ে তাঁর টেকনাফ সমান দূরসম্পর্কের কারো ঢাকা মেডিকেলে চান্স পাবার কৃতিত্ব জাহির করে। কখনো হয়তো আব্বু-আম্মুও রাগের দরুণ দুএকটা কথা শুনিয়ে দেন। কেমন লাগে তখন?
কান্না আসে না?
দলাবাধা কান্নারা বুক ছাপিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে উথাল পাথাল করে না? কতটা কষ্টে তুমি সে কান্নাগুলো চেপে রাখো, সে কথা তুমি ছাড়া কে জানে?
তুমি বরং খানিক কাঁদো। মন ভরে কাঁদো। হালকা হও।
প্রিয় ভাইয়া এবং আপু,
আমাদের এই পৃথিবীর সবাই কাঁদতে পারে। কিন্তু সবাই যেটা পারে না, সেটা হচ্ছে, সেই কান্না মুছে আবার উঠে দাঁড়াতে। বুকটা চিতিয়ে নিজেকে দেখিয়ে দিতে।
খুব সহজ একটা হিসেব করো।
এবার সর্বমোট পরিক্ষার্থী ছিলো ৮২৭৮৮ জন। মেডিকেল কলেজগুলোতে সীটসংখ্যা সবমিলিয়ে ৩৩১৮ টি।
তাহলে প্রতিটি সীটের জন্য পরীক্ষা দিয়েছে গড়ে ২৫ জন।
এই ২৫ জনের মধ্যে একজন হচ্ছো তুমি,যার ঐ সীটটি দখল করার সম্ভাবনা মাত্র ০.০৪ ভাগ!
আমাদের প্রত্যেকেই একই সম্ভাবনা নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি।
আমাদের মধ্যেই কেউ চান্স পেয়েছে, কেউ পায়নি। কিন্তু
তুমি চান্স পাওনি মানে এই না,তুমি চান্স পাওয়ার যোগ্য না!
এটা বরং আমাদের সিস্টেমের দুর্বলতা যে, এতো বিপুল সংখ্যক মেধাবীদেরকে আমরা জায়গা দিতে পারি না।
এই ০.০৪ ভাগ সম্ভাবনাকে পুরো একভাগ করতে পারেন একজনই। কে বলোতো?
হ্যাঁ, হ্যাঁ। একদম ঠিক ধরেছো!
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা। তিনি চাইলে যে কোন কিছুই সম্ভব। বিশ্বাস করো, যে কোন কিছুই!
আল্লাহ চাইলে দুঃখে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সুখ ঢেলে দিতে পারেন, চাইলে ক্ষত বিক্ষত হৃদয়ে বুলিয়ে দিতে পারেন সান্ত্বনার প্রলেপ। দুঃখের পরে তিনি সুখ দেন, তাতো আল্লাহরই ওয়াদা। জানো না?
তবু তোমার মনে হাজারো প্রশ্নের ফুলঝুরি।
ভাইয়া, সেকেন্ড টাইমে কি আসলে চান্স হয়?
হয়রে ভাইয়া, হয়। ৫ মার্ক কেটে হয়, ৭ কেটে হয়, ৭.৫ কেটেও হয়। একটু খুজলে তোমার একদম ধারেকাছেই পেয়ে যাবে।
এবছর মোট সীটের 'এক-তৃতীয়াংশ'ই ছিলো সেকেন্ড টাইমার!
বিশ্বাস হয়?
ভাইয়া, পাঁচ মার্ক কাটলে চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় না?
তাতো যায়ই। কিন্তু একবার ভাবোতো, একজন মানুষ এখনো পড়াশুনা শুরু করেনি, আর তুমি এখন থেকে পড়বে। পড়বে। পড়তেই থাকবে। একদম পরীক্ষার আগ পর্যন্ত আট-দশবার রিভাইজ দিয়ে ফেলবে, এরপরেও তুমি ওই মানুষটার চাইতে পাঁচটা মার্ক বেশি তুলতে পারবে না!
পারবে ভাই। তোমাকে যে পারতেই হবে!
না হলে তোমার বাবার স্বপ্নটার কি হবে?
না হলে তোমার মায়ের ওই অশ্রুজলের কি হবে?
এত সহজেই তুমি হেরে যাবে?
সারা পৃথিবী তোমার বিরুদ্ধে দাড়িয়ে যাক, তুমি শুধু তোমার স্বপ্নটারে অমলিন রেখো। পাশের মানুষজন টিপ্পনী কাটুক, টিটকারি দিক, সফল অন্য কারো কাল্লনিক গল্প শোনাক। তুমি মুখ বুজে থাকো।
দাঁতে দাঁত চেপে একটা বছর অপেক্ষা করো।
আগামী দিন থেকে পৃথিবী তোমার হবে।
তোমার সাফল্যে ওরাই আবার হাত তালি দেবে।
শুধু মাঝের কয়েকটা দিন!
পারবে না?
''এক আধটুকু পুড়তে দে তোর
খুব ভেতরের 'আমি'রে
রাতের পাখিই প্রথম দেখে
ভোর বিহানের সূর্যরে''
শুভকামনায়,
MasterPiece University Admission Coaching.
"The M@ster of Masters"
Committed to building up your Dream.
#A Scholastic Guide to Shape Your Future Brightly.
Comments
Post a Comment